Mohammed Shami: ভারতীয় ক্রিকেট টিম বিশ্বকাপের ফাইনালে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছে। গত বুধবারে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মাঝে (India Vs New Zealand Semi Final Match) সেমিফাইনাল হয়। এই ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে জয়লাভ করে ভারত। ৭০ রানে নিউজিল্যান্ডকে পরাজিত করে ফাইনালে স্থান পাক করে নেয় রোহিত শিবির। এই ম্যাচে প্রত্যেক খেলোয়াড় দুর্দান্ত খেললেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মহম্মদ শামী (Mohammed Shami)। আজকের প্রতিবেদনে মহম্মদ শামীর জীবন যুদ্ধ নিয়েই আলোচনা করা।
মহম্মদ শামীর জীবন যুদ্ধের কাহিনী (Mohammed Shami Life Story)
কখনও তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলা হয়েছে, তো কখনও বলা হয়েছে বেইমান। নানা ধরণের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০২১ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তানের কাছে হেরে গেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু নেটিজেন তাঁকে ট্রোল করে তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তোলে। একসময় মহম্মদ শামীর বিরুদ্ধে বেইমান হওয়ারও অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী হাসিন জাহান (Hasin Jahan)। হাসিন জাহান এখানেই থামেননি। তিনি শামীর বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক অভিযোগও তোলেন। শামী তখন চুপচাপ সবকিছু সহ্য করতে থাকেন।
২০২০ সালে করোনা অতিমারির সময়ে রোহিত শর্মা ও শামী ইন্সটাগ্রাম লাইভে এলে প্রকাশ্যে আসে শামীর জীবনের কঠিন অধ্যায় সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য। শামী জানান যে, বিভিন্ন রকমের অভিযোগের কারণে নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা জেগে গেছিল তাঁর এবং এই কারণেই তাঁর মনে আত্মহত্যার কথা আসে। এরপরে তিনি আরও জানান যে, মোট ৩ বার তিনি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্তও নেন। শামীর আরও সংযোজন, তাঁর পরিবার সঙ্গে না থাকলে আবার খেলার ময়দানে ফিরে আসতে পারতেন না। তিনি জানান, “আমার মনে হয় পরিবার আমার পাশে না থাকলে হয়তো আমি ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দিতাম। আমি ৩ বারের মতো আত্মহত্যা করারও সিদ্ধান্ত নি। এই অবস্থায় আমার পরিবারের কেউ না কেউ আমাকে দেখার জন্য আমার পাশে বসে থাকতো। আমার ঘর ২৪ তলায়। আমার পরিবারের ভয় লাগতো, আমি কখনও সেখান থেকে ঝাঁপ না দিয়ে দি”।
শামী বিশ্বকাপের মাধ্যমে খেলার ময়দানে প্রত্যাবর্তন করেন। তাঁর এই প্রত্যাবর্তন যে বেশ হেঁকেডেকে হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একের পর এক রেকর্ড গড়তে থাকেন তিনি। ওয়ান ডে ম্যাচে ৭ উইকেট নেওয়া একমাত্র ভারতীয় খেলোয়াড় হলেন মহম্মদ শামী। এছাড়াও তিনি ভারতীয় খেলোয়াড় হিসাবে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও গড়েন। মোট ৫০টি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছরে তাঁকে একের পর এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। ২০১৭ সালে ২৬ জানুয়ারি তিনি বাবাকে হারান। এই পরিস্থিতি থেকে কোনো রকমের সামলে উঠতে না উঠতেই প্রাক্তন স্ত্রীর অভিযোগের মুখে পড়েন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগও। এই সমস্ত কিছুর ঘটার পরেও পরিবারকে পাশে পেয়ে আবার ফিরে আসেন এই ভারতীয় খেলোয়াড়।
প্রত্যাবর্তন করার পরে শামী কঠিন পরিস্থিতিতে উইকেট নেওয়ার মাধ্যমে হাসি ফুটিয়ে দিয়েছেন সবার মুখে। কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল হওয়া মহম্মদ শামীর নামে আজ প্রশংসা করতে ক্লান্ত হচ্ছে না নেটিজেনরা। এই জন্যেই হয়তো অনেকেই বলছেন, “মহম্মদ শামী হওয়া সহজ কথা নয়”। কেউ আবার বলছেন, “মনে রাখবো, ‘কেন উইলিয়ামসন’ ও ‘ফাইনালে’র মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই মহম্মদ শামী”।