Viral Video: প্রযুক্তির উন্নতি মানবজীবনের মানোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তিতে উন্নয়ন একদিকে যেমন মানুষের জীবনে সমস্যা সমাধান করতে শুরু করেছে, তেমনই অপরদিকে কিছু অযাচিত ও অপ্রত্যাশিত সমস্যারও জন্ম দিয়েছে।
বর্তমানে মানুষ আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্সি (Artificial Intelligence) তথা এআই, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Vertual Reality), অগমেন্টেড রিয়েলিটি (Augmented Reality), রোবটিক্স (Robotics), মেটাভার্স (Metaverse) যুগের উত্থানের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। উল্লিখিত বিষয়গুলি সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহল জাগালেও, কিছু বিষয় মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ সৃষ্টি করেছে। দুশ্চিন্তার পরিবেশ সৃষ্টিকারী এমনই এক বিষয় হল ডিপফেক প্রযুক্তি (Deepfake Technology)। আজকের এই প্রতিবেদনে ডিপফেক কী? দৈনন্দিন জীবনে ডিপফেকের প্রভাব কী? কীভাবে নিজেকে ডিপফেকের শিকার হওয়া থেকে বাঁচানো সম্ভব? সবটাই নিম্নে আলোচনা করা হল।
ডিপফেক কী? (What is Deepfake?)
ভিডিওর জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ডিপফেক টেকনোলজি (Deepfake Technology)। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিডিওতে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির মুখমণ্ডল অন্য ব্যক্তির মুখমণ্ডলের সঙ্গে বদলে দেওয়া সম্ভব। ডিপফেকের মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যক্তি দ্বারা কথা বলানোর বা কাজ করানোর দৃশ্য দেখানো সম্ভব। এক্ষেত্রে মূলত মুখমণ্ডল ও কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করার মাধ্যমে ভিডিওর ফাইনাল প্রোডাক্ট তৈরি করা হয়।
ডিপফেক প্রযুক্তির ব্যবহার (Uses and misuses of Deepfake Technology)
ডিপফেক প্রযুক্তির সূচনা নিছক বিনোদনের জন্য হলেও বর্তমানে এর অপব্যবহার শুরু হয়েছে। বহুক্ষেত্রেই জীবিত (সেই ব্যক্তিরই) ও মৃত ব্যক্তিদের (তাঁদের পরিবারের) সম্মতি ছাড়াই ডিপফেক ভিডিও বানানো হচ্ছে এবং সোশ্যাল মিডিয়া তথা ইন্টারনেটের জগতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
ডিপফেক প্রযুক্তির কারণে বর্তমানে সাইবার ক্রাইমের প্রবণতা বাড়তে দেখা গিয়েছে। একাধিক বিশেষজ্ঞ এআই জেনারেটেড নকল ফটো ও ভিডিওকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ বহুক্ষেত্রেই কপিরাইট প্রোটেকশন নেই। সম্প্রতি রশ্মিকা মন্দনার (Rashmika Mandan) ডিপফেক ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরেই এই ইস্যু ভারতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।
রশ্মিকা মন্দনা ডিপফেক ভাইরাল ভিডিও (Rashmika Mandana Deepfake Viral Video)
রশ্মিকার ডিপফেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে বেশ কিছু সুপরিচিত মুখ ডিপফেকের বিরুদ্ধে সরব হন। এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর (Rajeev Chandrashekhar) ও অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bacchan) এই অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছে।
🚨 There is an urgent need for a legal and regulatory framework to deal with deepfake in India.
You might have seen this viral video of actress Rashmika Mandanna on Instagram. But wait, this is a deepfake video of Zara Patel.
This thread contains the actual video. (1/3) pic.twitter.com/SidP1Xa4sT
— Abhishek (@AbhishekSay) November 5, 2023
জার্নালিস্ট অভিষেক নিজের এক্স হ্যান্ডেল (পূর্বে টুইটার) থেকে রশ্মিকার ডিপফেক ভিডিওর পাশাপাশি আসল ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা থাকে, “ভারতের ডিপফেক ভিডিও মোকাবিলা করার জন্য শীঘ্রই কড়া ও জরুরী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আপনি হয়তো রশ্মিকার এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছেন। তবে থামুন, এই ভিডিও আসল ভিডিও নয়। এটা আসলে ব্রিটিশ-ভারতীয় মেয়ে জারা প্যাটেল (Zara Patel)-এর ডিপফেক ভিডিও। এই ভিডিও জারা ৯ অক্টোবর তারিখে নিজের ইনস্টাগ্রাম আইডি থেকে পোস্ট করেন”।
সতর্কবার্তা (Caution)
১. ডিপফেক কী বুঝতে হবে এবং কীভাবে এটা পরিচালিত হয় জানতে হবে।
২. মিডিয়া কন্টেন্টের বৈধতা যাচাই করতে হবে। প্রয়োজনে একাধিক সূত্র ঘাঁটতে হবে।
৩. সোশ্যাল মিডিয়ায় গোপনীয়তা যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখুন, যাতে সবাই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অ্যাক্সেস না করতে পারে।
৪. কঠিন ও ইউনিক পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। প্রয়োজনে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্য নিতে পারেন।
৫. অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। সন্দেহজনক ইমেল ও মেসেজ থেকে দূরে থাকুন।
৬. শেষ আপডেটেড সিকিউরিটি প্যাচ অনুযায়ী নিজের ডিভাইস আপডেট করুন। ভালো অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।
৭. টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন উপলব্ধ থাকলে তা চালু করুন।
৮. ব্যক্তিগত তথ্য কারোর কাছে শেয়ার করার আগে শেয়ার করা ঠিক হবে কিনা সবকিছু ভালো করে খুঁটিয়ে জানুন।
৯. আপনি কখনও কোনো প্ল্যাটফর্মে ডিপফেক ভিডিওর মুখোমুখি হলে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম বা কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করুন।
১০. ডিপফেক প্রযুক্তি আরও উন্নত হচ্ছে। বিভিন্ন আপডেট নিয়ে সচেতন থাকুন।